শনিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১০

মীর শওকত আলীকে আমরা কীভাবে মনে রাখবো?

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমাণ্ডার, বীর উত্তম মীর শওকত আলী মৃত্যুকে বরণ করেছেন। পত্রিকাগুলো বক্স কলাম করে সে সংবাদ ছাপছে। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব, পরবর্তী রাজনৈতিক জীবন আর শেষ জীবনে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্দোলনের কথা লেখা হচ্ছে। তা পড়ে শ্রদ্ধায় সবার মাথাই নত হয়ে যাবে এই মহান বীরের স্মরণে।
কিন্তু কোথাও লেখা হচ্ছে না বা লেখা থাকছে না, জিয়ার আমলের অগুণতি মুক্তিযোদ্ধা সামরিক অফিসার হত্যাকাণ্ডে মীর শওকত আলীর ভূমিকাটুকু। অথচ সবাই জানে তখন জিয়ার দুটো ডানহাত, মঞ্জুর আর মীর শওকত। সামরিক বাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা অফিসার নির্মূল করার আয়োজনে মীর শওকতও কম কৃতিত্বের অধিকারী ছিলেন না। যদিও স্বার্থ হাছিলের পরে জিয়া দুজনকেই ছুঁড়ে ফেলে দেন, বদলি করে দেন ঢাকার বাইরে।

আমরা মীর শওকত আলীকে কীভাবে আর কোন ভূমিকায় মনে রাখবো? ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাকে কোন ভূমিকায় মূল্যায়ন করবে?

রবিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১০

হুদাই

অনেক বেশি আলসেমি হয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রচুর কাজ জমে আছে। কেন আমার কিছু করতে ইচ্ছে করে না? অন্তত সপ্তাহখানেক পাগলের মতো কাজ করা জরুরী। সামনে অনেক কঠিন সময়।
কোলকাতা থেকে আসার পর খুব একটা কাজের নেশা উঠেছিলো, কিন্তু সুমনদের সাথে আড্ডার পর আবার কাজ জমে যাচ্ছে। নেট কানেকশন খুব স্লো ছিলো কয়েকদিন। তবু সারাদিন সেখানেই।

এখন এই পোস্টটা কেন দিচ্ছি জানেন?
কারণ ঠিক এই পোস্টটা শেষ করেই আমি কাজে বসবো। এটাকে উপসংহার বলতে পারেন। অন্তত এক সপ্তাহ কাজ করবো ঠিক পাগলের মতোই।

আগামীকালকে রিপোর্ট পেশ করতে আসবো এখানেই। দেখা যাক এর মধ্যে কাজ করতে পারি কী না...

বৃহস্পতিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১০

২৫ আগস্ট ২০১০

কোলকাতা থেকে ফিরে ভেবেছিলাম কিছুদিন পাগলের মতো কাজ করবো। কীসের কী?
প্রথম দিন আলসেমিতেই কাটলো।
পরেরদিন মহাসমারোহে কম্পিউটার চালু করে একটা বই পড়তে বসে গেলাম। হোসে সারামাগোর গল্প অবলম্বনে মঞ্চ নাটক অচিন দ্বীপের খোঁজে। পড়ে অবশ্য তেমন মজা পেলাম না। মনে হলো ইচ্ছাকৃত ভাবে ছোট আকারে করা হয়েছে। আরেকটু বাড়তে পারতো। তবে কিছু কিছু সংলাপ সত্যিই মুগ্ধ করার মতো।

তারপর ভাবলাম এবার কাজ করা উচিত। বিআইএফটির জন্য প্রপোজাল লিখলাম। ম হামিদ ভাইকে ফোন করলাম। তারপরই নামলো ঝমঝমানো বৃষ্টি। দেখে এমন লোভ হলো... মনে হলো এই বৃষ্টিতে না ভিজলে পাপ হবে নির্ঘাত। তো ঝাঁপিয়ে পড়লাম জলে।

খানিক হেঁটে চলে গেলাম ইস্কাটন গার্ডেন রোডে। সেখানটা ভেজার জন্য দারুণ। ভীড় ভাট্টা নাই... আমোদে হাঁটা যায়। দেখলাম এক যুগল হাত ধরাধরি করে হাঁটছে। ভালো লাগলো... দুঃখও... হায়রে... আমার হাতখানা ধরার কেউ নাই :(

সিদ্দিকা কবীরের বাড়ির সামনে জল জমেছে। তাতে একগাদা পোলাপান ডুবে ডুবে খেলছে। আহ্... দারুণ লাগলো দেখতে।
আর বাংলামোটরে যাওয়ার গলিখানায় একদল কিশোর খেলছে বোম্বাস্টিং। দেখেই ফিরে গেলাম সেই পুরনোতে, ছোটবেলায়। মনটা চাইলো খেলতে নামি। কিন্তু হায়... বয়স হয়ে গেছে... ওরা কি আমায় দলে নেবে?

একটা ছোট হোটেল। ভিজতে না চাওয়া মানুষগুলো আশ্রয় নিয়ে আমাকে দেখছে বিস্ময়ে। আর পাশে গরম গরম পুরি ভাজা হচ্ছে। লোভ লাগলো খেতে। কিন্তু ভেজার অজুহাতে তো টাকা পয়সা নিয়ে বের হইনি। আচ্ছা, বাকীতে খেতে চাইলে দুটো পুরি খেতে দিতো ওরা? আমার ধারণা দিতো। কিন্তু আমার যে সঙ্কোচ! পুরনো বয়স থাকলে ঠিক চেয়ে খেয়ে নিতাম দুটো।

দুটো অবজার্ভেশন... বয়স যে হয়ে গেছে তা ঢুকে গেছে মনের মধ্যে, আর যা কিছু দেখি তাতেই লোভ লাগে- বোম্বাস্টিং থেকে পুরি... [এমনকী সিলটি অর্থেও ;) ]

একটা বাড়ির সামনে অনেক গাছ। তারই কোনো পাতার আড়ালে একটি পাখি ডাকছে। চিল চিৎকারের মতো। অনেক চেষ্টা করেও পাখিটি দেখা গেলো না।

তুমুল বৃষ্টিতে ভিজলাম মন ভরে। ইশ্ নিধিটা সঙ্গে থাকলে ভালো হতো। ওর মা অবশ্য ওকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেয় না ঠাণ্ডা জ্বরের ভয়ে। একদিন অবশ্য রাজী করিয়ে ফেলেছিলাম, কিন্তু প্রিপারেশন আর নিধিকে নিয়ে ছাদে উঠতে উঠতে বৃষ্টি উধাও হয়ে গেছিলো :(
অবশ্য আমি কোলকাতা থাকাকালে নাকি রাজিয়া একদিন নিধিকে নিয়ে ভিজেছে বৃষ্টিতে। শুনে আমোদ হলো। সর্দির ভয়ে বৃষ্টিতে না ভেজা প্যানপ্যানানো মেয়ে কেন আমার হবে? নিধি ভিজবে বৃষ্টিতে অবিরাম।

বৃষ্টি কমে এলো। আমিও বাড়ির পথ ধরলাম। একটা বাড়ির সামনে পলাশ গাছ। তা থেকে ফুল ঝরে পড়ে আছে রাস্তায়। মন চাইলো কুড়াই। ঐ যে... ভেতরে অনেক লোভ...
কিন্তু সংযম পালন করলাম। লেখক কাজী ইমদাদুল হকের বাড়িতে একটা অজানা অচেনা ফুলের গাছে অনেক দারুণ ফুল ফুটে আছে... লাল টকটকে... দেখতে ভালো লাগলো।

বৃষ্টিতে আটকে থাকা মানুষেরা রাস্তা বোঝাই করে আছে। তাদের ফাঁক ফোকর দিয়ে কোনোমতে বাড়ি ফিরে এক মগ জম্পেশ চা। আহ্...
তারপর গেলাম ম হামিদ ভাইয়ের অফিসে। প্রপোজাল দিয়ে এলাম। তারপর গেলাম সুমনের অফিসে। আমার থিয়েটার আমলের প্রথম বন্ধু। একসময় আমি সুমন আর রওনক প্রায় চব্বিশ ঘন্টা একসঙ্গে থাকতাম, কিন্তু এখন দেখাই হয় না, যোগাযোগ হয় না। বন্ধুত্বটা ফিরিয়ে তুলতে হবে। সুমনকে ধরে নিয়ে এলাম বাড়িতে। ফোন করলাম রওনককে। রওনক থাকে আমার বাড়ির উল্টোদিকেই। ব্যাস, জমে উঠলো আড্ডা। রয়েল স্ট্যাগ গ্লাসে গ্লাসে ঝরতে থাকলো।
দেখা গেলো আমাদের তিনজনের জীবনেই অনন্ত হীরা ভাই একটা বড় পার্ট। রাত বারোটার পরে হীরা ভাইকেও ফোন করে ধরে আনলাম বাড়িতে। তারপর আবার আড্ডা। আমাদের থিয়েটার তাদের থিয়েটার। নাগরিককে গালিগালাজ... রওনক চলে গেলো।
এর মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিলাম তিনজনে মিলে নাটকের কারখানা খুলবো। রওনক নাম দিলো 'তিনের তলোয়ার'। নামটা পছন্দ হয়েছে। প্রথম নাটকটা আমি লিখবো, সুমন বানাবে, রওনক নায়ক। সিলেটে সুটিং। সেপ্টেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে।
আমাদের স্বপ্নগুলো আমরা বানাবো এখান থেকে।

ওরা চলে গেলো। তারপর আর কিছু মনে নেই। মদের প্রেমের শরাব পিয়ে বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে হায়...